সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:০৯ অপরাহ্ন
Reading Time: 3 minutes
মুরাদ হোসেন,হাবিপ্রবি দিনাজপুর :
ঢাকা-দিনাজপুর মহাসড়কের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা উত্তরবঙ্গের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়- হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্যাশা প্রাপ্তির দুই যুগ পেরিয়ে আজ ২৫ বছরে পদার্পণ করছে।
সবুজ গাছপালার সমারোহে বেষ্টিত এ বিশ্ববিদ্যালয়টি দিনাজপুর সদর হতে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে বাঁশেরহাট নামক স্থানে ৮৫ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত।
১৯৯৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করে কৃষি ও বিজ্ঞান চর্চার উচ্চশিক্ষার বিদ্যাপীঠ হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি)। তেঁভাগা আন্দোলনের অন্যতম নেতা হাজী মোহাম্মদ দানেশের নামে নামকরন করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়টির। বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরুর পূর্বে এটি ১৯৭৬ সালে এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন ট্রেনিং ইনিস্টিটিউট (AETI) হিসেবে কৃষিতে ডিপ্লোমা ডিগ্রী প্রদান করতো। পরে ১৯৮৮ সালের ১১ নভেম্বর ইনস্টিউটকে স্নাতক পর্যায়ে কৃষি কলেজে উন্নীত করা হয়। এটি তখন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ এর অধিভুক্ত একটি কলেজ ছিল। পরে কলেজটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করার লক্ষে ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্প’ গ্রহণ করা হয়। ৮ জুলাই ২০০১, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাশ হয় এবং ২০০২ সালের ৮ এপ্রিল প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ায় মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট মৃত্তিকা বিজ্ঞানী প্রফেসর ড: মো: মোশাররফ হোসাইন মিঞাঁকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। বর্তমানে ৭ম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড.এম.কামরুজ্জামান।
লাল-সাদা ইটের দৃষ্টিনন্দন সুবিশাল ভবনের পাশাপাশি এখানে রয়েছে শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনার, জিমন্যাশিয়াম, টিএসসি, ক্যান্টিন।অবকাঠামোর মধ্যে রয়েছে বৃহৎ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ৫টি অ্যাকাডেমিক ভবন (১ টি নিমার্ণাধীন), একটি প্রশাসনিক ভবন, ৫টি ছাত্র হোস্টেল (একটি বিদেশী শিক্ষার্থীদের), ৪ টি ছাত্রী হোস্টেল, আধুনিক সাজসজ্জা বিশিষ্ট ১০০ আসনের একটি ভিআইপি সেমিনার কক্ষ, ৬০০ ও ২৫০ আসন বিশিষ্ট দুটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অডিটরিয়াম। এছাড়াও একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে পূর্ণাঙ্গ করতে রয়েছে শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ক্লাব, ২টি মসজিদ, আবাসিক ইউনিট/ভবন, ১টি শিশুপার্ক, পোষ্ট অফিস, রূপালী ব্যাংক শাখা, মেঘনা ব্যাংক শাখা, শ্রমিক ব্যারাক, নিজস্ব বৈদ্যুতিক লাইন, বৃহৎ খেলার মাঠ, ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ এবং ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা।
গবেষণা ও প্রশিক্ষণের সমন্বয় ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং (আই.আর.টি.)। আছে একটি ভি. আই. পি গেস্ট হাউস, হাবিপ্রবি স্কুল, ডাক্তার ও এ্যাম্বুলেন্সসহ ১২ শয্যার একটি মেডিক্যাল সেন্টারও। গবেষণালব্ধ থিসিস, রিপোর্ট, জার্নালের পাশাপাশি রয়েছে ৩৫ হাজার বইয়ের সমৃদ্ধ লাইব্রেরি। দুষ্প্রাপ্য গাছ-গাছালির আকর্ষণীয় সংগ্রহ নিয়ে গড়ে উঠেছে একটি সমৃদ্ধ বোটানিক্যাল গার্ডেন এবং বিভিন্ন বিভাগের তত্ত্বাবধানে গবেষণার জন্য জামপর্স্নাজম সেন্টার। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হিসেবে সরকারি শহীদ আকবর আলী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজ রয়েছে। কৃষকের দোর গোড়ায় কৃষিসেবা পৌঁছে দিতে নির্মিত হয়েছে কৃষক সেবা কেন্দ্র, গবাদিপশুর চিকিৎসা সেবায় রয়েছে ভেটেরিনারি টিচিং হাসপাতাল ও মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিক, স্কলারশিপ ও ক্যারিয়ার সংক্রান্ত তথ্যের জন্য আছে ক্যারিয়ার এডভাইজারি সার্ভিস (ক্যাডস) এবং একটি কৃষি,মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ গবেষণা কমপ্লেক্স। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মাধ্যম ইংরেজি কোর্স ক্রেডিট সেমিস্টার পদ্ধতিতে পরিচালিত। বর্তমানে ৯টি অনুষদের অধীনে (পোস্টগ্র্যাজুয়েটসহ) ৪৫টি বিষয়ের ওপর ২৩টি ডিগ্রি প্রদান করা হয় এবং প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী নিয়মিত অধ্যয়ন করছেন।
দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরির লক্ষ্য নিয়ে নানাবিধ সংকট থাকা স্বত্ত্বেও এগিয়ে চলছে সামনের দিকে৷ দীর্ঘ এ পথচলায় প্রাপ্তির খাতায় যেমন যুক্ত হয়েছে নানা অর্জন, তেমনি অপ্রাপ্তির পাতাও। দীর্ঘ এ পথচলায় নানামুখী সংকট ছিল প্রতিষ্ঠানটির নিত্য সঙ্গী। তাই ২৩ বছরেও নানাবিধ সংকট থেকে বের হতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়টি।
বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান বিভাগ সংখ্যা ৪৫টি। নতুন বিভাগ খোলাতে রয়েছে নানা সংকট। নতুন অনেকে বিভাগেরই নেই নিজস্ব শ্রেণিকক্ষ, ল্যাব ও সেমিনার কক্ষ। ফলে ক্লাস করতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় শিক্ষার্থীদের।
বিভাগ ও শিক্ষক-শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত মানের শিক্ষা ও গবেষণা নিশ্চিত করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়টি। নিশ্চিত হয়নি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যবস্থাও। পর্যাপ্ত নয় পরিবহন সংখ্যাও। ছাত্র সংসদের ফি নেয়া হলেও দুই দশকেও নির্বাচন হয়নি ছাত্র সংসদ, এমনকি নেই কোন ছাত্র সংসদ ভবন। বিশ্ববিদ্যালয় আইনে রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট এর কথা উল্লেখ থাকলেও এখন পর্যন্ত সে স্বীকৃতি পায়নি বিগত সময়ে পাশ করে যাওয়া শিক্ষার্থীরা। বিগত ২৩ বছরেও উপ-উপাচার্য নিয়োগ হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। হয়নি কোন এলামনাই এসোসিয়েশনও। ২৩ বছরে সমাবর্তন হয়েছে মাত্র একবার।
প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হলেও ইন্টারনেট সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন হলের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার অন্যতম অংশ গবেষণা। সেই গবেষণা কাজের জন্য নেই পর্যাপ্ত গবেষণা মাঠ কিংবা আন্তজার্তিক মানের গবেষণাগার। যেগুলো আছে সেগুলোতে আছে নানাবিধ সমস্যা।